anowar sir.jpg

সাংবাদিক রিমা’র বকেয়া গোল্ডমেডেল এবং ‘মানবিকতা’ শব্দের দায়!

মেয়েটি পেশায় সাংবাদিক হলেও আমার কাছে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়- তিনি ছিলেন আমার একজন বিশ্বস্ত বন্ধু। শুধু তাই নয়, সিলেটে আমার অনেক অনেক কাজের প্রধানতম নেপথ্য ‘নায়ক,’ও তিনিই। যদি ইচ্ছে অটুট থাকে ক্ষুদ্র একটি মেয়ের পক্ষেও কি করা সম্ভব, কতো কিছু করা সম্ভব- করোনার প্রথম ঢেউয়ের নিদানকালে একজন রিমা তা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।

আমি তখন সিলেটের শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডারের দায়িত্বে। লকডাউন পরিস্থিতিতে আমরা ক্যাম্পের সদস্যরা নিজেদের বেতন -রেশন বাচিয়ে প্রতিদিন যতটুকু পারি হাওরবাসী মানুষের কাছে নিয়ে যাই। এতটুকু সবাই জানেন। কিন্তু যা জানেন না, তা হল আমাদের প্রতিদিনকার ক্ষুদ্র ত্রাণ আয়োজনে রিমার (এবং আমার আরো দুয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীরও) অবিস্মরণযোগ্য অবদানের কথা। এমনও হয়েছে, খবর পেয়েছি এক এলাকায় কিছু পরিবার না খেয়ে আছে, কিন্তু আমাদের হাতে দেওয়ার মতো কিছু নেই। রিমাকে ফোনে জানাতেই বলেছেন, ‘বন্ধু আপনি চিন্তা করবেন না, ব্যবস্থা করছি। বুকে হাত রেখে বলছি, এমন একবারও হয়নি যে, তিনি ব্যবস্থা’ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ডোনার ম্যানেজ করে হোক, নিজ গাঁট থেকে দিয়ে হোক তিনি ঠিকই চালডাল ভর্তি কিছু বস্তা নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন। শুধু তাই নয়, মেয়ে হয়েও তিনি দিনরাত সবসময়ই আমাদের সাথে সশরীর উপস্থিত হয়ে যেতেন অসহায় মানুষদের দুয়ারে দুয়ারে।

প্রায়সময় তিনি ঘরে রান্না করে ২০/৩০ প্যাকেট খাবার সঙ্গে নিয়ে নিতেন। বলতেন- ‘বন্ধু, রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা অনেক মানুষ আছে, যাদের রান্নার ব্যবস্থা নেই। তাদের জন্য এক বস্তা চালডালের চেয়ে এক প্যাকেট রান্না করা খাবার বেশি কাজে লাগবে”। শুনে হতবাক হয়ে যেতাম। ক্ষুধার্ত, নিরন্ন মানুষের জন্য কতটা গভীর হৃদয়ভরা মমতা থাকলে এভাবে করে ভাবতে পারা যায়! আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করি, রিমার মতো মানুষগুলোকে পাশে পেয়েছিলাম বলেই আমাদের পক্ষে করোনাকালে অসহায় মানুষদের জন্য যৎসামান্য কিছু করা সম্ভব হয়েছিল। মাঝেমাঝে উপরওয়ালার উপর ভীষণ অভিমান হয়- পৃথিবী জুড়ে লুটেরা, বদমাশ, গুণ্ডারা প্রতিনিয়ত কত কত অনিষ্ট অনাচার ঘটিয়েও দিব্যি যুগযুগ ধরে বেঁচে আছে, পৃথিবীর অন্ন ধ্বংস করছে; আর

সেখানে এমন মানবপ্রেমী, কর্মবীর, পরোপকারী মেয়েটাকে, তাও এত অকালে, উঠিয়ে নিয়ে যেতেই হল!!!পেপারপত্রিকায় দেখি, প্রতিবছরই সরকারি -বেসরকারি অনেক সংস্থা কর্তৃক বড়বড় সব হলরুমে জমকালো অনুষ্ঠান করে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে মানবিকতার পক্ষে ভূমিকা রাখার জন্য পুরস্কার /গোল্ডমেডেল প্রদান করা হয়ে থাকে। জানি না দিনের পর দিন গরিব, নিরন্ন, আশ্রয়হীন মানুষের দুঃখমোচনে কাজ করে যাওয়ার পুরস্কার হিসেবে রিমার ভাগ্যে মরণোত্তর হলেও তেমন একটি মেডেল জুটবে কিনা! না জুটলেও সমস্যা নেই, আসল গোল্ডমেডেল- উপকারভোগী অসহায় সেসব মানুষদের দোয়া, নিশ্চয়ই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার আমলনামায় পৌঁছে গেছে।

রিমাকে চিনি বলেই বলি, রিমার কার্যক্রমের ঘনিষ্ঠ একজন সাক্ষী হিসেবে জানি- এই মেয়েটিকে বাদ দিয়ে মানবিক কার্যক্রমের জন্য দেওয়া সবরকম পুরস্কার/মেডেল অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ। রিমা নিভৃত স্বভাবের মেয়ে, পুরস্কারের জন্য কাজ করতেন না। এমনকি এমনও কেউ কোনদিন দেখাতে পারবে না যে, নিজের পত্রিকায় তিনি নিজের কাজের ন্যূনতম ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, ‘মানবিকতা’ শব্দটির সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য, একজনের অনন্য অবদান হতে মানবিকতা শব্দটির দায়মুক্তি ঘটানোর জন্য হলেও রিমাকে এই গোল্ডমেডেলটি দেওয়া প্রয়োজন। আমি ঘোষণা দিলাম, ইনশাআল্লাহ কোনদিন যদি আমার আর্থিক সঙ্গতি হয়, আমি নিজ খরচে একটি গোল্ড মেডেল বানিয়ে রিমার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেব। নিজের কাজের মূল্যায়ন হতে দেখে ওপারে বসেও তিনি সুখ অনুভব করবেন আমি নিশ্চিত। অলক্ষে মৃদু হেসে বলবেন- ‘এতকিছুর কী দরকার ছিল বন্ধু!’ হ্যা, আমরা অদ্ভুতভাবে পরস্পরকে আপনি করে বলার পাশাপাশি বন্ধু সম্বোধনও করতাম।
পরপারে সুখে থাকুন রিমা, প্রিয় বন্ধু আমার।

Md. Anwar Hossan (Shamim Anwar)
বিসিএস (পুলিশ)
এএসপি, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ
সাবেক কমান্ডার, শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্প।ও
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, র‍্যাব-৯ করোনা রেসপন্স টিম

আমরা আমাদের ব্লগে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন লেখা পাবলিশ করি।আমরা এসব তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে সেই বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখে আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করি।সুতরাং আপনি আমাদের ওয়েবসাইটের লেখাগুলো কোন রকম দ্বিধা-দন্দ ছাড়াই অনুসরন করতে পারেন।ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *