আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেল!কথাটা মূলত অশান্তি অর্থে বুঝানোর জন্য বলা হয়ে থাকে।কিন্তু আসলেই কি তেজপাতা অশান্তি?না মোটেই তেজপাতা কোন অশান্তির জিনিস নয়।প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন রকমের খাবারে তেজপাতার ব্যাবহার করা হয়ে আসছে এবং প্রাচীন কালে তেজপাতা একটি ঔষধি পাতা হিসাবেও ব্যাবহার করা হত।আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তেজপাতার বহিমুখি কিছু গুনের কথা সম্পর্কে জানবো।
আপনার মাথায় যদি খুশকির উপদ্রপ বেড়ে জায় এবং আপনি আপনার মাথার চুল পরে যাওয়া নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন তাহলে শুধু কয়েকটি তেজপাতা নিয়ে এক পাতিল পানিতে সিদ্ধ করে নিন এরপরে ঠাণ্ডা করে আপনার মাথা ধুয়ে ফেলুন।তবে অবশ্যই তেজপাতার পানি মাথায় শ্যাম্পু ব্যাবহার করার পরে ব্যাবহার করতে হবে।আপনার মাথা যদি চুলকানো জাতীয় সমস্যা হয় তাহলে একই পদ্ধতি ব্যাবহার করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
আপনি যদি একজন ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য তেজপাতা আশীর্বাদ সরূপ ভাবতে পারেন।গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন মাত্র দুই বার তেজপাতা গ্রহন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে।কারন তেজপাতার ঔষধি গুন আমাদের শরীরের ইনসুলিন সঠিক মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের হজমের সমস্যা হলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।আপনি জানলে অবাক হবেন যে তেজপাতা আমাদের দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।কারন তেজপাতায় এনজাইম নামক একটি উপাদান থাকে যা দ্রুত খাবার ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে।কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা ছারাও যাদের অতিরিক্ত প্রসাবের সমস্যা আছে তাঁদের জন্য তেজপাতা বিশেষ উপকারী।
তেজপাতায় রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড নামক উপদান থাকে যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নষ্ট করে ফেলে এবং হার্টকে মজবুত করতে সাহায্য করে।সুতরাং আপনি যদি আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত তেজপাতা গ্রহন করুন।
আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যাথা দূর করতে তেজপাতা সিদ্ধহস্ত।যেকোনো ধরনের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে তেজপাতা এবং রেড়ির পাতার পেস্ট ব্যাথাযুক্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে।আর যদি আপনার মাথা ব্যাথা করে তাহলে দ্রুত আরোগ্য পেতে তেজপাতার তেল মাথায় মালিশ করলে মাথা ব্যাথা সেরে যাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে তেজপাতায় ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন নামক উপদান থাকার কারনে তেজপাতা ক্যান্সারের কোষকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখে।তেজপাতা যেকোনো ধরনের ক্যান্সারের কোষ ধংস করার পাশাপাশি মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোষও নষ্ট করে ফেলতে পারে।
তেজপাতা উপরোক্ত উপকারের পাশাপাশি দ্রুত ক্ষতস্থান শুকানোর কাজে সাহায্য করে,কারন তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল নামক দুইটি উপদান আছে যা আপনার শরীরের ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে এবং ক্ষতস্থানে ছত্রাকের আক্রমন হতে রক্ষা করে।
জসি কারও ঠাণ্ডা লাগা জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে কয়েকটি তেজপাতা পানিতে গরম করে নিতে হবে এবং কুসুম গরম থাকা অবস্থায় একটি কাপড় ভিজিয়ে বুক এবং পিঠ মুছতে হবে।দেখবেন আপনার ঠাণ্ডা লাগা জনিত সকল সমস্যা দ্রুত কমে যাবে।খেয়াল রাখবেন গরম করা পানি যেন কোনভাবেই অতিরিক্ত গরম না হয়।
আমাদের শরীরের ইউরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসতে তেজপাতা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।শরীরে অতিরিক্ত ইউরিয়া হলে তা আমাদের কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে এবং গ্যস জাতীয় সমস্যা সৃষ্টি করে।সুতরাং গ্যাস এবং কিডনি সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদের নিয়মিত তেজপাতা খাওয়া উচিত।
আমাদের মাঝে অনেকেরই সারাদিনই মন মেজাজ গরম থাকে আবার কারও পরিমিত ঘুম হয়না।এমন সমস্যা কারও হলে বিশেষজ্ঞরা তাঁদেরকে দিনে অন্তত এক কাপ তেজপাতার চা খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।কেননা তেজপাতা আমাদের স্নায়ু শান রাখতে সাহায্য করে ফলে আমাদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা কমে যায়।
Leave a Reply